গান্ধীজীর রাজনৈতিক দর্শনের মূল সূত্র গুলি আলোচনা করো? অথবা গান্ধীজীর চিন্তা ধারার মূল বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো?

গান্ধীজীর রাজনৈতিক দর্শনের মূল সূত্র গুলি আলোচনা করো ? অথবা গান্ধীজীর চিন্তাধারার মূল বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো?



ভূমিকা: গান্ধীজীর রাজনৈতিক দর্শন: গান্ধীজী কোন রাষ্ট্র দার্শনিক ছিলেন না। তার ভাষায়,'গান্ধীবাদ বলে কিছু নেই..... নতুন কোন নীতি বা তত্ত্বের স্রষ্টা হিসেবে আমি কিছু দাবি করি না । মরো, রাস্কিন, টলস্টয় এর লেখা ও ভগবত গীতা, উপনিষদ, রামায়ণ মহাভারত, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা কে যুক্ত করে গান্ধীজি তার নিজের মতবাদ তৈরি করেন

১) অহিংসা : গান্ধীজীর মতাদর্শের মূলমন্ত্র ছিল অহিংসা। গান্ধীজীর মতে অহিংসা বলতে "চরমতম স্বার্থহীনতা" কে বোঝায়। তার দৃষ্টিভঙ্গিতে অহিংসা হল ইতিবাচক ভালোবাসা। অহিংসা দুর্বলতা নয় অহিংসা এক নৈতিক শক্তি এক সদর্থক ধারণা। সত্য প্রেম ভালোবাসার মতো মানবিক গুণাবলী গুলি গান্ধীজীর অহিংসা আর ধারণার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

২) সত্যাগ্রহ : অভিধানিক অর্থে সত্যাগ্রহ হল সত্যের প্রতি আগ্রহ । গান্ধীজীর সত্যাগ্রহের আদর্শ হল সত্যের জন্য তপস্যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ হল এমন এক আদর্শ যার সাহায্যে প্রতিপক্ষের হৃদয়ের পরিবর্তন করা যায়। সত্যাগ্রহ দুর্বলের অস্ত্র নয় এটি একটি আত্মিক শক্তি। এখানে ভীরুতা বা কাপুরুষতার কোন স্থান নেই।

৩) সর্বদয় : সর্ব এবং উদয় এই দুটি শব্দ নিয়ে সর্বোদয়। সর্বদয় এর আক্ষরিক অর্থ হলো সকলের কল্যাণ। সমাজে এক উন্নত নৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলাই সর্বোদয় এর উদ্দেশ্য। সত্য ও অহিংসা এবং সৎ উপায়ে এই পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করতেন। সর্বদয় সমাজে। সকলে সমান। ভালোবাসা এর ভিত্তি আত্মত্যাগ হল এর মূল কথা। আধুনিক বৃহৎ শিল্প সভ্যতাকে সর্বোদয় সমর্থন করে না।

৪) রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা: গান্ধীজীর মতে বলপ্রয়োগ হল আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি। মানুষের দুর্বলতার জন্য রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্র যে চরম সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী তা তিনি বিশ্বাস করতেন না। তিনি জনগণের সার্বভৌমিকতায় আস্থাশীল ছিলেন। তার মতে সেই রাষ্ট্র সবচেয়ে ভালো রকম শাসন করে। আদর্শ রাজনৈতিক ব্যবস্থার রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্র থাকবে বলে তিনি মনে করেন। রাষ্ট্রহীন এই গণতন্ত্র হলো গান্ধীজীর রাম রাজ্য।

৫) স্বরাজ সম্পর্কে ধারনা: স্বরাজ কথাটির অর্থ হল স্বরাজ্য বা স্বশাসন। গান্ধীজীর মতে স্বরাজ হল এক আদর্শ মানব সমাজ, এক উন্নততর সামাজিক ব্যবস্থা যার মূল ভিত্তি হলো পরিপূর্ণ সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচার। গান্ধীজীর কাছে স্বরাজ এক উচ্চ মানবিক ও নৈতিক আদর্শ।

৬) গ্রামীণ পুনর্গঠন এর ধারণা গান্ধীজী বিশ্বাস করতেন ভারতের প্রাণশক্তি গ্রাম গুলির উন্নতির মধ্যে নিহিত রয়েছে। তাই ভারতের গ্রামীণ পূনর্গঠনের জন্য তিনি সমবায় প্রথার প্রচলন, জমিদারি প্রথার সংস্কার, গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ প্রভৃতির ওপর জোর দিয়েছিলেন।

৭) গণতন্ত্র সম্পর্কিত ধারণাগান্ধীজীর মতে গণতন্ত্র ও হিংসা পাশাপাশি থাকতে পারে না। তিনি পশ্চিমি গণতন্ত্রের কঠোর সমালোচক কে ছিলেন পশ্চিমে গণতন্ত্রকে  নামমাত্র গণতন্ত্র বলেছেন। 

তার মতে যারা মানুষ হিসাবে ভাল ও খাঁটি তাদের মধ্য থেকে থেকেই তাদের মধ্য থেকেই গণতন্ত্রের প্রতিনিধি বাছাই করতে হবে।
মূল্যায়ন: গান্ধীজী তার চিন্তা ধারার মূল বৈশিষ্ট্য গুলি মধ্যে এই সকল ধারণা গুলি পাওয়া যায় যা তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে পড়ার মাধ্যমে তার নিজস্ব চিন্তাধারার দার্শনিক জগৎ গড়ে তোলেন।

মহাত্মা গান্ধী ছিলেন ভারতের স্বাধীনতার অন্যতম ব্যক্তিত্ব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন