ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন ও ডঃ সুকর্ণর ভূমিকা লেখ | ইন্দোনেশিয়ার বিকাশ কর্মসূচি ও জাতিসংগঠন সম্পর্কে আলোচনা করো | Indonesia and doctor shukranu

ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন ও ডঃ সুকর্ণর ভূমিকা লেখ | ইন্দোনেশিয়ার বিকাশ কর্মসূচি ও জাতিসংগঠন সম্পর্কে আলোচনা করো


ভূমিকা : জাভা, সুমাত্রা, বনি ও সহ অসংখ্য ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ইন্দোনেশিয়া গড়ে ওঠে। এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ, ধান, নারকেল ও উৎপাদিত রবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে হল্যান্ডের ডাচরা সেখানে তাদের ঔপনিবেশিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। 1800 থেকে 1842 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এখানে হল্যান্ডের আধিপত্য ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ইন্দোনেশিয়া দখল করে নেই। কিন্তু যুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে সেখানে পুনরায় হল্যান্ড আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অগ্রসর হলে ইন্দোনেশিয়া বাসীরা মুক্তি সংগ্রাম শুরু করে এবং স্বাধীনতা লাভ করে (১৯৪৯)।

আরো পড়ুন -:

হল্যান্ডের ডাচদের শোষণ ও অত্যাচার :
হল্যান্ড ইন্দোনেশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ ও স্বর্ণ দ্রব্য লুন্ঠন করে এবং বিংশ শতকের শুরুতে সেখানে খনিজ তেল আবিষ্কৃত হলে সেখানে তারা নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। ফলে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি পুরোপুরি ডাচদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং ইন্দোনেশিয়া বাসীরা দরিদ্রসীমার নিচে চলে আসে। হল্যান্ডের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এর কোনো সুযোগ ছিল না।

জাপানের অগ্রগতি :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান সাম্রাজ্য নীতি গ্রহণ করে ইন্দোনেশিয়া সহ এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নেই। সেখানে তারা ডাচদের মতো সীমাহীন শোষণ ও নির্যাতন চালায় নি। বরং তারা ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা আন্দোলনকে উৎসাহ দান করে। তারা ডাচ আধিকারিকদের বন্দি করে ইন্দোনেশিয়ার মুক্তিসংগ্রামের মুক্তি দেয়। ইন্দোনেশিয়ায় ডাচ ভাষার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এবং সেখানে দেশীয় ভাষা চালু করে।

পশ্চিমা শক্তির ব্যর্থতা :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি হলান্ড দখল করে নেই। ইন্দোনেশিয়ায় পশ্চিমা শক্তি শূন্যতার সুযোগে জাপান সেখানে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। জাপানের কাছে পশ্চিমী শক্তিগুলির পরাজয় স্বাধীনতা অর্জনে উৎসাহিত করে।

জাতীয়তাবাদের প্রসার :
জাপানের উদ্যোগে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কালে ইন্দোনেশিয়ায় জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বুদিউতামা, সারেকাত ইসলাম, কমিউনিস্ট দল প্রভৃতি জাতীয়তাবাদী সংগঠন এর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়ায় বিরোধী মুক্তিসংগ্রাম শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ডক্টর সুকর্ণ নেতৃত্বে গঠিত জাতীয়তাবাদী দল ইন্দোনেশিয়ায় অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে হলান্ড পুনরায় ইন্দোনেশিয়া দখলে উদ্যত হয়। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার বাসিরা মুক্তি সংগ্রাম শুরু করে এবং 1945 খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা ঘোষণা করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। ডক্টর সুকর্ণ রাষ্ট্রপতি এবং মোহাম্মদ হাত্তা প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

গ্রেফতার-: ডাচরা ইন্দোনেশিয়ায় দ্রুত সামরিক অভিযান চালায় জাভা ও সুমাত্রা ইন্দোনেশিয়া দখল করে নেয় এবং ডক্টর সুকর্ণ ও মোহাম্মদ হাত্তাকে গ্রেপ্তার করে।

চুক্তি স্বাক্ষর-: ডক্টর সুকর্ণ হাত তার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সমগ্র ইন্দোনেশিয়ায় বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বৃটেনের সহায়তায় হলান্ড ইন্দোনেশিয়া মধ্যে একটি চুক্তি হয়। হল্যান্ড সুমাত্রার সুকর্ণ প্রজাতান্ত্রিক সরকারের শাসন মেনে নেই।

আন্দোলনের প্রসার ও স্বাধীনতা লাভ-:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ডাচের বিরুদ্ধে ডক্টর সুকর্ণ ও তার ন্যাশনাল পার্টি তীব্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু করে। প্রবল আন্দোলনের চাপে  1949 খ্রিস্টাব্দে 27 শে ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে ডক্টর সুকর্ণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন।

ইন্দোনেশিয়ার বিকাশ কর্মসূচি ও জাতী সংগঠন-:
স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার বিকাশ ও জাতির সংগঠনের ধারণাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। এগুলি হল

প্রথম পর্যায়: প্রথম পর্যায়ে ইন্দোনেশিয়ার মানুষ জাতি হিসেবে সচেতন হয়ে উঠতে থাকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয় এবং ইন্দোনেশিয়া ধারণাটি সৃষ্টি হয়ে ওঠে  1928 খ্রিস্টাব্দে জাকার্তা শহরে যুবকদের এক সভায় পৃথক জাতি হিসেবে ইন্দোনেশিয়া জাতি স্বতন্ত্রের কথা ঘোষণা করে। বিচ্ছিন্ন ইন্দোনেশিয়ার ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে। ওই পরিবার বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠলো।  1945 খ্রিস্টাব্দে ডক্টর সুকর্ণ ও মোহাম্মদ হাত্তা ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

দ্বিতীয় পর্যায়-:
দ্বিতীয় পর্যায়ে জাতীয় সংহতি ও জাতীয়তাবোধ উদ্ভূত ইন্দোনেশিয়ার জনগণ বিদেশি শাসকের বিরোধিতা করে লক্ষ্যে মরণপণ সংগ্রাম শুরু করে। শেষ পর্যন্ত উপনিবেশিক শক্তির পতন ঘটে এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম ইন্দোনেশিয়ার জন্ম হয়।

তৃতীয় পর্যায়-:
তৃতীয় পর্যায়ে প্রজাতান্ত্রিক ইন্দোনেশিয়া সংস্কার প্রতিষ্ঠিত হয় সংবিধানিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্দোনেশিয়া আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘটিত ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্তে পড়ে এবং শেষপর্যন্ত রাশিয়ার প্রভাবে ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টি 1965 খ্রিস্টাব্দে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক জেগে উঠতে শুরু করে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ